সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শুরুর কথা!! (পর্ব-৪)
আবুল হোসাইন মাহমুদ
আবারো পেছনে যেতে হচ্ছে। মতিউর রহমান মল্রিক এর পরে এবং আসাদ বিন হাফিজের আগে সাইমুমের দায়িত্ব পালন করেন ডা. স ম রফিক। যিনি ডা. আকরামের তত্ত্বাবধানে পাঞ্জেরী প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সম্ভবত মেডিকেলের পরীক্ষার কারণে পুরো সেশন শেষ করতে পারেননি।
শিল্পী সংগ্রহে মতিউর রহমান মল্লিক থানার দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার সুফল পেয়েছিলেন তিনি। সাইমুম থানা হওয়ার আগ পর্যন্ত সকল শিল্পীই কোন না কোন থানার জনশক্তি ছিল।
৭৯ সালের দিকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসায় একটি টিসি হয়েছিল। সেখানে শিল্পী সিরাজ উদ্দিন একটি হামদ বা নাত পরিবেশন করলে মতিউর রহমান মল্লিকের নজরে আসেন সিরাজ উদ্দিন। এরপর থেকে আগামসিহ লেনে নিয়মিত যাতায়াত ও গানের রেহার্সেলে অংশ নিতেন।
১ম পর্বের লিঙ্কঃ সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কে হামদ, না‘ত ইসলামী গান রচনা...
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউ থেকে নেয়া হয়েছিল শিল্পী সিদ্দীক আহমদকে। দায়িত্বশীল আবু হানিফের মাধ্যমে খবর পেয়ে শিল্পী নিজেই গিয়ে উপস্থিত হন আগাসাদেক লেনের অফিসে। এটা ৮০ সালের দিকের কথা। এরপর থেকে সিদ্দিক আহমদ নিয়মিত সাইমুমের শিল্পী।
৮২ সালে বিআইসি সিরাত উপলক্ষে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তাদের নিজস্ব অফিসে।সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলে কামরুল ইসলাম হুমায়ুন। সেখান থেকে মতিউর রহমান মল্লিক টার্গেট করে কামরুল ইসলাম হুমায়ুনকে সাইমুমে নিয়ে আসেন।
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে ।
একটু নিজের এবং সামান্য পেছনপানে। আমি তখন চাঁদপুরের শাহতলীতে। ঢাকায় যেতে হবে। কর্মী সম্মেলন ৮১। সবার সাথে এলাম । স্বপ্নের সম্মেলনের সফলতা আমাকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অভিনবত্ব দেখে এই তৃষিত অন্তর সেদিন আকন্ঠ পান করেছিল তার সৌন্দর্য্যকে। তারই ফলশ্রæতিতে এই কন্ঠ থেকেও আল্লাহ জাল্লা জালালুহু সামান্য সুর কাজে লাগিয়েছেন। সম্মেলন থেকে ফিরে গিয়ে আমি সাথে সাথেই শাহতলীতে ‘নিশাত শিল্পী গোষ্ঠী’ নামে একটি শিল্পী গোষ্ঠী গঠন করি। অবশ্য প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক। শাহতলীর আবুল খায়ের আমার সহকারী ছিল। জানাজানি হওয়ায় দু এক জায়গায় অনুষ্ঠানও করতে হয়েছে। এরপর ডাক এলো কুমিল্লা শহর থেকে। কুমিল্লায় তখন সিন্দাবাদ নামে একটি শিল্পী গোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল।যার দায়িত্বে ছিলেন আমিনুল ইসলাম । আমাকে কুমিল্লার সিন্দাবাদ শিল্পী গোষ্ঠীতে গান গাইতে হবে। চাঁদপুর মহকুমার সেক্রেটারী সাইফুদ্দীন আমাকে ট্রেনিং এর জন্য কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিলেন। তখন ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপার ছিল। সম্ভবত শিবিরের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সিন্দাবাদের হযে গান গাওয়ার জন্যই আমাকে চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা আনা হয। খুব সম্ভব মোহন- মোশারফ (ব্যাংক কর্মকর্তা ইকবাল কবীর মোহন ও মোশারফ হোসেন ) পরিষদ ছিল। কুমিল্লায় প্রশিক্ষনের সময় আমার রাত কাটানোর স্থান ছিল আবদুশ শহীদ নাসিমের বাসা। যাই হোক তারপর ঢাকায় তেজগায়ে চলে এলাম ৮২ এর শেষের দিকে। সে বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সীরাত উদযাপনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কেরাত ও নাতে পুরস্কৃত হই। ১৯৮৪ সালে একই প্রতিযোগিতায় গ’ গ্রæপে হামদ, না’ত ও ইসলামী গানে আমি প্রথম হই। এ বছরই হামদ নাত ও ইসলামী গান একটি বিষয় হিসেবে প্রতিযোগিতা হয়। এর আগে হামদ, নাত, ও ইসলামী গান আলাদা আলাদা বিষয় ছিল। আমার যদ্দুর মনে পড়ে ঐ প্রতিযোগিতায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নিয়েছিলেন শিল্পী আবুল কাশেম, শিল্পী তারিক মুনাওয়ার ও শিল্পী সাইফুল্লাহ মানছুর। ফলাফল ঘোষনার পর দেখলাম ছোট অডিটোরিয়ামের একপাশ থেকে দুজন লোক এসে আমার পাশে বসলো। আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। তারাও তাদের পরিচয় দিল। তাদের একজন ছিলেন তারেক মুনাওয়ার অন্যজন ছিলেন সাইফুল্লাহ মানছুর। তারা আমাকে সাইমুমে যাওযার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এভাবেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থেকে তখন শিল্পী সংগ্রহ করা হতো। আমি নিজেকে সাইমুমের সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু ঢাকায় গত কয়েক বছর আমি তেজগাঁয়ে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনসহ অনেক সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। শিবিরের তখন খুবই দুর্দিন চলছিল। থানার সব উপশাখা সহ সব দায়িত্বশীলই নন-কোঅপরেশন হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে ঢাকায় এসেও আমি নিজে থেকে সাইমুমের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। যাই হোক, তারিক মুনাওয়ারের আমন্ত্রণে আলফালাতে সাইমুমেম রেহার্সালে উপস্থিত হলাম। সাইমুমের তখন ইসলামী ফাউন্ডেশনের সীরাত পক্ষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রেহার্সাল চলছিল। আমাকে সেই অনুষ্ঠানে শামিল করা হলো। ১৯৮৪ সালের ১৫ই জানুয়ারী সচিবালয়ের দক্ষিণে এখনকার উসমানী উদ্যান আর তখনকার রেলওয়ে ময়দানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এ্ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি সাইমুমের সাথে মঞ্চে উঠি। যে অনুষ্ঠানটিকে এখনো পর্যন্ত সাইমুমের সেরা অনুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদ্দূর মনে পড়ে যেখানে সাইমুমের ব্যানারে মঞ্চে উঠেছিল চট্টগ্রামের পাঞ্জেরী, খুলনার টাইফুন ও বরিশালের হেরার রশ্মি শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।
এরপর থেকে আমি সাইমুমের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাই। কিন্তু তখনো আমি তেজগাঁয়ে সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করি। পরবতীতে আমাকে সাইমুমের জনশক্তি করা হয় ৮৪ সালের শেষের দিকে।এরজন্য প্রচুর পরিশ্রম করেছেন শিল্পী নোমান আযমী । তিনি তেজগাঁয়ের সেই বিখ্যাত জোনাকী মেসে কয়েকবার গিয়েছেন শুধু আমার জন্য। প্রথমে আমাকে অফিস সেক্রেটারী করা হয়। সাথে সাথে শুক্রবারে সাইমুম অফিসে বড়দের গানের ক্লাশেরও দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন নতুন শিক্ষার্থীদের পদচারনায় সাইমুমের কাজী অফিস লেনের অফিস মুখর থাকতো। এরপর পর্যায়ক্রমে বায়তুলমাল ও প্রকাশনার দায়িত্ব আসে। ৮৯ এ সালমান আযমী পরিচালক হলে আমাকে সেক্রেটারী করা হয়। ৬ মাস পর আমাকে মহানগরীর স্কুল বিভাগ ও পরে সাংবাদিক ফোরামের দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর মানজুর মোয়াজ্জম পরিচালক হলে আমাকে মহানগরীর ঐ দায়িত্ব থেকে সাইমুমে তত্বাবধায়ক হিসেবে আনা হয়। কারণ মানজুর মোয়াজ্জমের বয়স কম হওয়ায় তাকে সহযোগিতা করার জন্য আমাকে আনা হয়।
পূর্বের পর্বের লিঙ্কঃ সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কে হামদ, না‘ত ইসলামী গান রচনা...
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন