বিষয়ঃ রমাদানুল মুবারক, পরিকল্পনা ও কিছু কথা লেখকঃ তালহা যুবায়ের পর্বঃ ০২
ব্যক্তিগত প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
নিজেকে নিয়ে ভাবুন, প্রথমেই ভাবুন এটাই জীবনের শেষ রমজান, নিজের গুনাহ মাফ করে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে ঘনিষ্ঠ করে তোলার এই তো মহাসুযোগ। পিছনের রমজানে কি কি করতে চেয়েছেন কিন্তু করতে পারেন নি তার জন্য আল্লাহর পানাহ চেয়ে একটা তালিকা নোটপ্যাড, ডায়েরী অথবা মনে মনে সাজিয়ে ফেলুন। এবছরের কি কি করতে চান তা নিজের মত করে ভেবে নিন। আগের মত করে তালিকা করে নিন আল্লাহ ভরসা করে। এক্ষেত্রে স্লিপিং পেপার বা স্টিকি পেপারে পড়ার কিংবা ওয়ার্কিং টেবিলে লাগিয়ে নিলে ভালো। সেক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। যা যা করা যেতে পারে...
প্রথমত পুরো শাবান মাস জুড়ে আল্লাহর প্রিয় রাসূল (সঃ) ও তার সাহাবীদের মত রোজা রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দুটি সুন্নাহ রোজা যেমন সোমবার, বৃহ:বারের রোজা এবং আইয়্যামে বিজের (আরবি মাসের মাঝামাঝি সময়ে) রোজাগুলো অধিক সাওয়াবের হবে ইনশাআল্লাহ। (৩)
কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ না হলে এ বছরই শুদ্ধ করে শেখার সংকল্প করে ফেলুন। অনলাইন, অফলাইনে অসংখ্য ফ্রি কুরআন প্রশিক্ষন কোর্স চলে রমজানকে কেন্দ্র করে। ব্যস্ততা থাকলেও ভর্তী হয়ে যান আল্লাহ ভরসা করে।
কুরআন অর্থসহ শেষ করতে পারেন অথবা কোন একটি/দুটি/নিজের মনমত অংশ তাফসিরসহ শেষ করার পরিকল্পনা নিতে পারেন।
কুরআনের ছোট ছোট সূরাগুলো অথবা যেকোন জায়গা পছন্দের বা সহজ মনে হয় এমন কিছু আয়াত নিয়মিত মুখস্তের চেষ্টা করা।
রাসূলের জীবনী বহুদিন আগে পড়া থাকলে অথবা না পড়া থাকলে আবার পড়ে ফেলার সংকল্প করে ফেলুন। আর-রাহিখুল মাখতুম, সীরাত ইবনে হিশাম অথরা স্বীকৃত যেকোন একটা পড়লেই হলো। অনলাইনেই পিডিএফ ও পাওয়া যায়।
প্রতিরাতে অন্তত ৮ রাকায়াত হলেও তারাবীহর চেষ্টা করা। মসজিদে জামাতে পড়তে পারলে তো ভালো তা না হলে কিংবা দেশের বাইরে যারা তারা বাসায় সবাইকে নিয়ে পড়ে ফেলুন। বিশ রাকাত পড়তে পারলে তো আলহামদুলিল্লাহ ।
প্রতি রাতে একবার হলেও নিভৃতে আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেয়ার চেষ্টা করা।
স্যোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে প্রডাক্টিভ অথবা কার্যকর সময়ের বাইরে ব্রাউজ না করার চেষ্টা করা।
অন্য সময়ের মতই চোখ, কানের জিনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। তবে রমজান যেহেতু বাকি ১১ মাসের জন্য প্রশিক্ষন সেহেতু ভুলবশত বা দূর্বলতাবশত ফেসবুক, ইউটিউব বা বাস্তব জীবনে চোখ বা কানের পবিত্রতার বাইরে যা হতো যেমন বিপরীত লিঙ্গের কলিগের সাথে অকারণে গল্প, অশ্লীল দৃশ্যসম্পন্ন বা পর্দা নষ্ট হয় এমন মুভি বা নাটকে ক্লিপ দেখা, অশ্লীলতা উসকে দেয় এমন গান শোনা ইত্যাদি থেকে নিজেকে সম্পুর্ণ বিরত রাখার চেষ্টা করা।
পূর্বের পর্ব পড়তে-- রমাদানুল মুবারক, পরিকল্পনা ও কিছু কথাঃ ১ম পর্ব
এর বদলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি কুরআন তেলাওয়াত, দেশি বিদেশী ইসলামী গান, আবৃ্ত্তি, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে লেকচার শোনা অথবা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে নির্মিত ক্লিপ দেখা যেতে পারে। যেটি হয়তো আপনার, আমার বাকি ১১ মাসের সাংস্কৃতিক অভ্যাসের মধ্যেও নিয়ে আসবে পরিশুদ্ধতা।
যেহেতু রমজানে সকল ইবাদতকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়ে থাকেন মহান আল্লাহ। তাই যাদের উপরে যাকাত ফরজ হয়েছে তারা যাকাত হিসেব করে যাকাতের খাতগুলো দেখে বা কোন বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করে যেকোন এক,দুই জায়গাতে দেয়ার চেষ্টা করা। যাতে যাকাতের পরিমাণটা বেশি হয় এবং যে কোন খাতের জন্যই তা সঠিক পরিমানে কার্যকর হয়। যেমন যদি একজন অভাবী ব্যক্তিকে যাকাত দিলে সে যাতে পরবর্তীতে যাকাত না নিতে হয় এমন অবস্থায় জীবন চালাতে পারে তার ব্যবস্থা করা। তবে যাদের অনেক টাকা যাকাত হয় তাদের হিসেব ভিন্ন। এক্ষেত্রে কারো যাকাত কম হলে দুতিনজন মিলেও কাউকে স্বাবলম্বী করে দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে তবে অবশ্যই বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
যেকোন একটি নফল ইবাদত বা সুন্নাহকে সারা বছরের জন্য শুরু করে দেয়া কারণ যেহেতু আল্লাহ স্পেশাল কিছুকে পছন্দ করেন। মনে আছে বেলাল (রঃ) এর মসজিদে ঢুকে দু রাকাত নামাজ আদায় আল্লাহর কাছে কত পছন্দনীয় হয়েছিলো। তেমনি হতে পারে অযুর পরে কালেমা শাহাদাত পড়া অথবা ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পড়া অথবা যানবাহনে উঠার দোয়াটা নিয়মিত পড়া কিংবা ছোট, বড় সবাইকে নিয়মিত সালাম দেয়ার অভ্যাস তৈরি করাসহ অসংখ্য ছোট ছোট সুন্নাহ।
সবশেষে রমজানের মধ্যে ডেডলাইন আছে এমন কোন অতিরিক্ত পরিশ্রমে কাজ আগেই করে ফেলার অথবা কাজ এগিয়ে রাখার চেষ্টা করা। যেমন কারো প্রজেক্ট প্রপোজাল/পেপার বা থিসিস পেপার অথবা আর্টিকেল কিংবা অন্য যেকোন কিছু।
এছাড়া যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের সবসময়েই উচিত তবে রমজানের আগে এবং পুরো মাস জুড়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে বিশেষ মনযোগ দেয়া। বিশেষ করে ইউরোপের উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে রোজাগুলো যেহেতু প্রায় ১৫-১৬ ঘন্টার বেশিই হয়ে থাকে।
(চলবে)
তথ্যসুত্র
৩: সাপ্তাহিক রোজা: নাসাঈ ২৩৬০; তিরমিযী ৭৪৫, আইয়্যামে বিজের রোজা: আবু দাউদ ২৪৪৯, বুখারী ১৯৮১
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন